রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত কমিটি।
রোববার (১৪ মার্চ) দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, ভিসির পিএস, ভিসি কার্যালয় ও বাসভবনের কর্মকর্তা, কর্মচারী, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, অভিযোগকারী শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩০-৩২ জন ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ এবং নথিপত্র সংগ্রহ করেছে দলটি। তবে এদিন ক্যাম্পাসে আসেননি উপাচার্য।
শুরুতে শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান স্বাক্ষরিত ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত ৪৫টি অভিযোগের বিষয়ে ইউজিসির দলটি তদন্তে এলেও পরে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের করা সব অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ ও নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়।
ক্যাম্পাসে উপাচার্যের অনুপস্থিতি, বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও ডিন নিয়োগে নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা, নিয়োগ কমিটি এবং নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম আছে কিনা এবং যত অনিয়মের অভিযোগ এসেছে সব কিছুই খতিয়ে দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্বজিৎ চন্দ।
তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আমরা আগেও ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছি। আজ সাক্ষ্য প্রমাণ নেয়া হলো। এসব যাচাই বাছাই করে যদি আরও ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় সেগুলো আমরা কালেক্ট করব।
তিনি বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর দালিলিক প্রমাণাদিসহ সাক্ষী এবং অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযোগের সবগুলো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে অবস্থান না করার বিষয়টি প্রধান অভিযোগ। এছাড়া বিভিন্ন জনের দায়িত্ব ভিসি একাই পালন করেন, ইচ্ছে মতো নিয়োগ দেন, এরকম অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে অভিযোগকারীদের ছাড়াও আর যাদের সাক্ষ্য নেয়া দরকার তাদের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে।
তদন্ত শেষে উপাচার্যসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান তদন্ত দলের প্রধান ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।
এদিকে উপাচার্য কলিমউল্লাহর দুর্নীতির তদন্ত যেন ভিন্ন খাতে না যায় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে রোববার রাত নয়টায় বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় তারা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া এতে নেতৃত্ব দেন। এসময় প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার সিন্ডিকেট রুমে ইউজিসির তদন্ত দল উপাচার্যের পক্ষে-বিপক্ষের শিক্ষক- কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষ্য নিচ্ছিলেন। পরে ইউজিসির তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলেন তুষার কিবরিয়া।
তুষার কিবরিয়া বলেন, এই উপাচার্য আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছেন। আমরা চাই, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য এবং দালিলিক প্রমাণ দিয়ে এসে অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, আমরা দালিলিক প্রমাণ দিয়েছি। এছাড়াও ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। সে কারণে আমরা মনে করি তাকে অপসারণ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়াও তার সাথে যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী জড়িত তাদেরকে চাকরিচ্যুত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে আর কেউ উচ্চ বিদ্যাপীঠকে এভাবে নষ্ট করতে না পারে।
উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমান বলেন, ইউজিসির তদন্ত দল এসেছে ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করেছে।
এর আগে রোববার (১৪ মার্চ) দুপুর পৌনে ১২টায় ইউজিসির সদস্য ও তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব জামাল উদ্দিন এবং ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. আবু তাহের ক্যাম্পাসে পৌঁছান। প্রশাসনিক ভবনের সিন্ডিকেট রুমে ১০ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার তদন্ত শেষে রাত ১০টায় বেরিয়ে যায় দলটি।